আমাদের যাদের সত্তরের শেষের দিকে জন্ম তাদের বেশ কয়েকটা দশক জুড়ে ছোটবেলা, এবং তারপর কিশোরবেলা।। ৮০-র পুরোটা, আর ৯০-র মাঝামাঝি অব্দি, তার একটা কারণ আমরা ছোট ছিলাম বেশ অনেকদিন, এখনকার মতো খুব তাড়াতাড়ি বড়ো হয়ে উঠিনি! সেই অনেকগুলো দশক জুড়ে আমাদের সেই ছোটবেলাটার এবং আরও অনেকের বেশ কয়েকটা ছেলেবেলা জুড়ে Opentee Bioscope ... হ্যাঁ, গণেশ যখন দুধ খেলেন, বা সূর্যগ্রহণ যখন হীরের আংটি তৈরি করল, তখন আমরা বড় হয়ে গেছি, কিন্তু যারা তখন ছোট তাদেরও ছোটবেলা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে Opentee Bioscope.. নাঃ, উত্তর কলকাতায় বড় হইনি, কিন্তু দক্ষিণের যে পাড়ায় বড় হয়েছি সেখানে ঝাঁচক্চকে আত্মকেন্দ্রিক ফ্ল্যাটবাড়ী কালচার ছিলনা।। পাশে একটা বস্তি আর পার্টি অফিস থাকার দরুণ নিত্য দেওয়াল-লিখন, পার্টির মিছিল, মাইক, নানান উদ্ভট উৎসব লেগে থাকত, আরও লেগে থাকত অনেক কিছু যা আজ অনেকদিন পর ছবিতে দেখে মনে পড়ল, দেওয়ালে ঘুঁটে দেওয়া - এখন বস্তিরও ঘরে ঘরে গ্যাস, তাই দেওয়ালে সারসার ঘুঁটের দৃশ্য আর দেখিনা, দেখিনা বহুরূপী, বুড়ির চুল, শুনিনা জিভছোলার আওয়াজ। আমাদের একটা পাড়া ছিল। পাড়ার বন্ধু ছিল, নিত্য খেলা ছিল, বাল্যপ্রেম ছিল, লুকিয়ে চিঠি ছিল, ভাব ছিল, রাগ ছিল -- ছোটবেলার আর বড় হয়ে ওঠার সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে ছিল পাড়ার সেই বন্ধুরা যাদের সাথে বিকেলের খেলা, জন্মদিনের সন্ধে, দোল, রবীন্দ্রজয়ন্তী, নাটক, বড় হওয়ার মানে বোঝা, ঠিক যেমন জড়িয়ে ছিল টিভি এন্টেনা, তাতে ছেঁড়া ঘুড়ি, ভাড়া করা সাইকেল, আবুলিশ। অনেক কিছু মনে পড়ায়, অনেক কিছু ফিরিয়ে দেয়, অনেক কিছু ফিরে দেখায় Opentee Bioscope ..যার সাথে প্রথম চুরমুর খাওয়া, যার কাছ থেকে বড়দের গোপন তথ্যগুলি সংগ্রহ মনে পড়ায় জীবনের সেই পর্যায়ে সেই বন্ধুর কথা।। নির্দেশক অনিদ্য চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতায় মন ভরে ওঠে। ঋদ্ধি সেন গোটা ছবি জুড়ে থাকতে থাকতে মন জুড়ে জায়গা করে নেয়। এই ছবিতে তিন অভিনেতার তিন পুত্রের অভিনয় মন কেড়ে নেয়, কৌশিকের পুত্র ঋদ্ধি (কহানীর পল্টু), শিলাজিতের পুত্র ধী, এবং শান্তিলালের ছেলে ঋতব্রত (কহানীর running hot water) আগামী বছরগুলিতে বাংলা ছবির পর্দায় যে বারংবার দৃশ্যমান হবে, তা নিয়ে কোনও সংশয় থাকে না। বিশেষ করে ঋদ্ধি (সাউথ পয়েন্টের ক্লাস ১১-র ছাত্র) বারবার মনে পড়ান যে তার অস্থি-মজ্জায় অভিনয়।
এই ছবি ভর্তি কোলাজ, ছোটবেলার টুকরো টুকরো ছবি জুড়ে জুড়ে বানানো। গানের কথায়-সুরে সেই সময়কারই মায়াবী ছোঁয়া। মনোগ্রাহী কাহিনী এবং টানটান ঘটনা পরম্পরা একমুহূর্ত ক্লান্ত করেনা। সুদীপ্তা চক্রবর্তী, রজতাভ দত্ত, কৌশিক সেন চমৎকার। একটি কিশোরের মায়ের ভূমিকায় সুদীপ্তার স্বাচ্ছন্দ্য মুগ্ধ করে। খুঁত আছে, কিন্তু এই ছবির খুঁত ধরতে মন চায়না। কত খুঁত নিয়েই তো ছোটবেলা!
এই ছবিটা যেমন মন ভালো করে, তেমনই, মন খারাপ ... খালি ঐদিনগুলোর কথা মনে পড়ে ।। সেই মুখগুলো, সেই আমিটা, সেই আমরা সব-আ-ই ! ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে ভেসে আসা সেই আমাদের দূরদর্শনের "মিলে সুর মেরা তুমহারা...", সেই ক্যাডবেরির বিজ্ঞাপনের নাচ, সেই ... আরও ক-ত কী!
অনিন্দ্যর প্রথম ছবি বুধবার বিকেলেও (৪-৩০ র শো) প্রায় হাউসফুল -- ছোটবেলার টান যে বড় অমোঘ, তা আরও একবার দেখাচ্ছে Opentee Bioscope! (যাদের নিয়ে একসাথে এই ছবিটা দেখতে পেলে বড় ভালো লাগত সেই পুপা, তিতলী, বাপুজী, ছোটবুড়ো, পিকলুদাদা, পিয়াল, জয়, কোয়েল, সোনু... তাদের সবার কথা মনে করে...)
No comments:
Post a Comment